বাগধারা নবম দশম শ্রেণির। বাগধারা অর্থসহ বাক্য রচনা।বাংলা দ্বিতীয় পত্র।Bagdhara
বাগ্ধারা
বাক্য বা বাক্যাংশের বিশেষ প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় বাগধারা। বিশেষ প্রসঙ্গে শব্দের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে বাংলায় বহু বাগধারা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের প্রয়োগের পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ অর্থের দ্যোতক হয়ে ওঠে। যেমন: "অন্ধকারে ঢিল ছোড়া" কথাটা দিয়ে বোঝানো হয়। 'আন্দাজে কিছু করা'। এর সঙ্গে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার বাস্তব কোনো সম্পর্ক নেই।
যে পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে আভিধানিক অর্থের বাইরে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বলা হয় বাগ্ধারা।
বাগ্ধারার সাহায্যে আমরা ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করি। ভাবের ইঙ্গিতময় প্রকাশ ঘটিয়ে বক্তব্যকে রসমধুর করে উপস্থাপনের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে বাগধারার। বাগধারার মাধ্যমে সমাজের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত হয়। এদিক থেকে বাগধারা বাংলা সাহিত্যের বিশেষ সম্পদ।
বাগধারা গঠনে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহারকে শব্দের রীতিসিদ্ধ প্রয়োগও বলা হয়। একে বাগবিধিও বলা হয়ে থাকে।
বাক্যে বাগধারা প্রয়োগের উদাহরণ :
অকাল কুষ্মাণ্ড (অকেজো) : অকাল কুষ্মাণ্ড লোকটা গতকালও কাজটা শেষ করতে পারেনি।
অকালপক্ব (ইঁচড়ে পাকা) : এমন অকালপক্ব ছেলেকে যে শিক্ষকরা প্রশ্রয় দেবেন না তাতে সন্দেহ নেই।
অকূল পাথার (মহাবিপদ) : ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পেরে অনেক ছাত্র অকূল পাথারে পড়েছে।
অক্কা পাওয়া মেরে যাওয়া) : যে কোনো দিনই থুথুড়ে বুড়োটা অক্কা পেতে পারে।
অগাধ জলের মাছ (সুচতুর ব্যক্তি) মোড়ল সাহেব অগাধ জলের মাছ, তাঁকে বোঝা বড় কঠিন।
অগ্নিপরীক্ষা (কঠিন পরীক্ষা): ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শ্রীলংকা সফর ছিল অগ্নিপরীক্ষা।
অগ্নিশর্মা (খুবই রাগান্বিত) : লোকটার বেয়াদবি দেখে বাবা রেগে অগ্নিশর্মা হলেন ।
অদৃষ্টের পরিহাস (ভাগ্যবিড়ম্বনা) : অদৃষ্টের পরিহাসে অনেক ধনকুবের পথের ফকির হয়ে গেল।
অনধিকার চর্চা (অজানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ) : আমি ব্যবসায়ী মানুষ, সাহিত্যের আলোচনা আমার জন্যে অনধিকার চর্চা
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা (অনুরোধে কষ্ট স্বীকার) : অনুরোধে অনেক ঢেঁকি গিলেছি, এখন আর পারছি না।
অন্ধের যষ্টি/নড়ি (ভাক্ষম লোকের একমাত্র অবলম্বন) : একমাত্র নাতিটি বুড়ির অন্ধের যষ্টি।
অন্ধকার দেখা (বিপদে সমাধানের উপায় না দেখা) : বাবার অকাল মৃত্যুতে মেয়েটা চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল ।
অন্ধকারে ঢিল ছোড়া (আন্দাজে কিছু করা) : অন্ধকারে ঢিল না ছুড়ে আসল ঘটনাটা জেনে এসো।
অমাবস্যার চাঁদ (দুর্লভ ব্যক্তি বা বস্তু) : আপনি দেখছি অমাবস্যার চাঁদ হয়ে উঠেছেন আপনার দেখাই মিলছে না।
অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল অনুনয়) : লোকটা হাড়কৃপণ, ওর কাছে কিছু চাওয়া আর অরণ্যে রোদন একই
অর্ধচন্দ্র (গলা ধাক্কা) দারোয়ান উটকো লোকটাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করে দিল।
আকাশকুসুম (অবাস্তব ভাবনা) : শহরের সেরা কলেজে ভর্তি হওয়া অনেকের জন্যই এখন আকাশকুসুম ব্যাপার।
আকাশ থেকে পড়া (স্তম্ভিত হওয়া) : পাপিয়ার কথা শুনে তাসলিমা যেন আকাশ থেকে পড়ল
আকাশ-পাতাল (সীমাহীন): শহর ও গ্রামের জীবনযাত্রায় এখনও আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।
আকাশ ভেঙে পড়া (মহাবিপদে পড়া) : বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় অনেক পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
আকাশে ভোলা (অতিরিক্ত প্রশংসা করা) : কেউ কেউ স্বার্থ হাসিলের জন্য কর্মকর্তাদের আকাশে তোলে
আকাশের চাঁদ (দুর্লভ বস্তু) : সেরা কলেজে ভর্তি হতে পেরে ভাইয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল।
আক্কেল গুড়ুম (হতবুদ্ধি অবস্থা : ছেলেটার কথাবার্তা শুনে তো আমার আক্কেল গুড়ুম!
আক্কেল সেলামি (বোকামির লণ্ড) : ধাপ্পাবাজ লোকটার পাল্লায় পড়ে টাকাগুলো আক্কেল সেলামি দিতে হলো।
আখের গোছানো (ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেওয়া) : দুর্নীতিবাজরা আখের গুছিয়ে নিলেও পার পাচ্ছে না।
আঙুল ফুলে কলাগাছ (হঠাৎ বিত্তবান হওয়া) : শেয়ারের ব্যবসায় কুদ্দুস সাহেব এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ
এটি কপালে (হতভাগ্য) : আট কপালে লোকের ভাগ্যে চাকরি জোটা মুশকিল।
আঠারো মাসে বছর (ঢিলেমি) : আমার মামা সব কাজেই দেরি করেন। সবাই বলেন তাঁর নাকি আঠারো
আদাজল খেয়ে লাগা (উঠে পড়ে লাগা) : পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য মাহমুদ আদাজল খেয়ে লেগেছে।
আরও পড়ুন:
আদায় কাঁচকলায় (শত্রুভাবাপন্ন ) : ওদের ভাইয়ে ভাইয়ে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক, কেউ কাউকে সহ্য করে
আবোল-তাবোল (এলোমেলো কথা): আসল ঘটনা লুকোতে গিয়ে সে আবোল-তাবোল বকে চলেছে।
আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অকেজো লোক) ও একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি, ওকে দিয়ে কাজটা হবে না।
আমলে আনা (গুরুত্ব দেওয়া): পুলিশ দারোয়ানের কোনো কথাই আমলে আনল না।
আলালের ঘরের দুলাল (বড় লোকের আদুরে ছেলে) : এই আলালের ঘরের দুলালটি কাজ দেখলে ভয় পায়।
আষাঢ়ে গল্প (বানানো কথা): সময়মতো কাজে আসোনি, তার জন্যে আষাঢ়ে গল্প বলার দরকার কী?
আসমান-জমিন ফারাক (বিপুল ব্যবধান) : ধনী ও গরিবের জীবনযাত্রায় আসমান-জমিন ফারাক।
আস্তানা গাড়া (সাময়িকভাবে কোথাও থাকতে শুরু করা) : বানভাসি লোকগুলো বাঁধের ওপর আস্তানা গেড়েছে।
আহলাদে আটখানা (আনন্দে আত্মহারা) মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ-প্লাস পেয়ে সে আহলাদে আটখানা।
ইঁচড়ে পাকা (অল্প বয়সেই পেকে গেছে এমন) : ওই ইচড়ে পাকা ছেলেটাকে পাত্তা দিলেই ঘাড়ে চেপে বসবে।
আসমান-জমিন ফারাক (বিপুল ব্যবধান) : ধনী ও গরিবের জীবনযাত্রায় আসমান-জমিন ফারাক।
আস্তানা গাড়া (সাময়িকভাবে কোথাও থাকতে শুরু করা) : বানভাসি লোকগুলো বাঁধের ওপর আস্তানা গেড়েছে।
আহলাদে আটখানা (আনন্দে আত্মহারা) মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ-প্লাস পেয়ে সে আহলাদে আটখানা।
ইঁচড়ে পাকা (অল্প বয়সেই পেকে গেছে এমন) : ওই ইচড়ে পাকা ছেলেটাকে পাত্তা দিলেই ঘাড়ে চেপে বসবে।
ইতর বিশেষ (সামান্য পার্থক্য) : ফলাফলে একই গ্রেড প্রাপ্তদের মধ্যে ইতর বিশেষ করা মুশকিল।
উড়ে এসে জুড়ে বসা (বিনা অধিকারে এসে সর্বেসর্বা হয়ে বসা) : উনি উড়ে এসে জুড়ে বসে মাতব্বরি করবেন, তা পুরোনোরা মানবেন কেন?
উত্তম-মধ্যম (প্রচণ্ড মার): ছিনতাইকারীকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলো।
উভয় সংকট (দু দিকেই বিপদ) : বিজ্ঞান না বাণিজ্য, কোনটা পড়ব এ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছি।
উলুবনে মুক্তো ছড়ানো (অস্থানে মূল্যবান কিছু প্রদান) : ওকে জ্ঞান দেওয়া আর উলুবনে মুক্তো ছড়ানো একই কথা।
এঁটে ওঠা (সমানে পাল্লা দিতে পারা) তোমার সঙ্গে এঁটে ওঠা মুশকিল।
এক কথার মানুষ (কথা রাখে এমন) : আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন, আমি এক কথার মানুষ।
একচোখো (পক্ষপাতদুষ্ট) : একচোখো লোকের কাছে কখনো সুবিচার আশা করা যায় না।
এলাহি কাণ্ড (বিরাট আয়োজন) : সওদাগর সাহেবের মেয়ের বিয়ে, এলাহি কাণ্ড তো হবেই।
একাই একশ (যথেষ্ট সমর্থ) : ঐ পুঁচকে ছোঁড়াকে মোকাবেলার জন্য আমি একাই একশ।
এসপার ওসপার (যে-কোনোভাবে মীমাংসা) : ঝামেলাটা আর সহ্য হয় না। এবার এসপার ওসপার করতেই হবে
ওত পাতা (সুযোগের অপেক্ষায় থাকা) বিড়ালটা মাছ চুরি করার জন্য ওত পেতে রয়েছে।
কড়ায় গণ্ডায় (সূক্ষ্ম হিসেব অনুযায়ী) ও তাঁর পাওনা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে এসেছিল।
কথার কথা (হালকা কথা): আমি কথার কথা একটা মন্তব্য করেছি আর তাতেই রাজু খেপে গেল।
কপাল ফেরা (সৌভাগ্য লাভ) : ছেলেটা হঠাৎ বিদেশে চাকরি পাওয়ায় চাচা-চাচির কপাল ফিরেছে।
কলুর বলদ (অন্যের জন্য একটানা খাটুনি) : সংসারের হাল ধরতে ছোট মামা কলুর বলদের মতো ঘানি টানছেন।
কাঁচা পয়সা (অল্প আয়াসে নগদ উপার্জন) : দুর্নীতি করে অনেকেই কাঁচা পয়সা কামাই করেছে।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব (অসম্ভব বস্তু): বাংলায় ১০০-তে ১০০ নম্বর পাওয়া কাঠালের আমসত্ত্বের মতো।
কাছাটিলা (অগোছালো স্বভাবের) : যেমন কাছাটিলা লোক তুমি, ছাতা তুমি হারাবে না তো কে হারাবে?
কাঠখড় পোড়ানো (নানারকম চেষ্টা ও পরিশ্রম) : কাজটা হাসিলের জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
কাঠের পুতুল (নির্জীব, অসার লোক) : কোনো কোনো মন্ত্রী হয়ে যান কাঠের পুতুল, সব কাজ চালান তাঁর সচিব।
কান খাড়া করা (মনোযোগী হওয়া) : আদালতে কী রায় হয় তা শোনার জন্য আইনজীবীরা কান খাড়া করে রইল
কান পাতলা (বিশ্বাসপ্রবণ) : বড় সাহেব এমন কান পাতলা যে তার অধীনে কাজ করাই মুশকিল।
কান ভারী করা (কারও বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি) : তুমি নাকি আমার বিরুদ্ধে বড়কর্তার কান ভারী করেছ?
কুল কাঠের আগুন (তীব্র মনঃকষ্ট) : লাঞ্ছনা অপমানে তার মনের মধ্যে কুল কাঠের আগুন জ্বলতে লাগল।
কূপমণ্ডূক (সংকীর্ণমনা লোক) : আমাদের সমাজে কূপমণ্ডুক লোকের অভাব নেই।
কেউকেটা (নিন্দার্থে গণ্যমান্য লোক) : আপনি কী এমন কেউকেটা যে আপনার কথা শুনতেই হবে।।
কেঁচে গন্ডুষ করা (পুনরায় প্রথম থেকে শুরু করা) : পুরো হিসাবটাই ভুল হয়েছে। আবার কেঁচে গন্ডুষ করতে হবে।
কেঁচো খুঁড়তে সাপ (সামান্য ঘটনার সূত্রে গুরুতর ঘটনা প্রকাশ) : জাল টাকা তদন্ত করতে গিয়ে বিরাট জালিয়াতি চক্র ধরা পড়ল— এ যে কেঁচো খুঁড়তে সাপ!
কোমর বাঁধা (কাজে উঠে পড়ে লাগা) : পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য তাহমিনা কোমর বেঁধে পড়াশুনায় লেগেছে।
খণ্ড প্রলয় (তুমুল কাণ্ড) মোবাইল ফোন হারানোকে কেন্দ্র করে পাশের বাসায় একটা খণ্ড প্রলয় ঘটে
গেছে।
খয়ের খাঁ (খোশামোদকারী, চাটুকার) : ক্ষমতাসীনদের চারপাশে খয়ের খা লোকের ভিড় জমে যায়।
খুঁটির জোর (পৃষ্ঠপোষকের সহায়তা) : খুঁটির জোর আছে বলেই সে বারবার বদলি ঠেকায়।
গড্ডলিকা প্রবাহ (অন্ধের মতো অনুসরণ) : বিত্তের মোহে সমাজের অনেকে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে
দেয়।
গণ্ডারের চামড়া (অপমান বা তিরস্কার গায়ে লাগায় না এমন) : ওর বোধ হয় গণ্ডারের চামড়া, তাই শতঅপমানেও কোনো ভাবান্তর নেই।
গদাই লশকরি চাল (ঢিলেমি) : এমন গদাই লশকরি চালে চললে কাজটা এ মাসেও শেষ হবে না।
গলগ্রহ (দায় বা বোঝা) : অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে না থেকে নিজের পায়ে দাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।
গাছে তুলে মই কাড়া (কাজে নামিয়ে সরে পড়া) : তোমার ভরসায় এত বড় কাজে হাত দিয়েছি। এখন গাছে তুলে মই কেড়ে নিচ্ছে যে!
গায়ে পড়া (অযাচিত ঘনিষ্ঠতা ) : অমন গায়ে পড়া লোককে চেয়ারম্যান সাহেব পাত্তা দেবেন বলে মনে হয়। না।
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো (কোনো দায়িত্ব গ্রহণ না করা) ও নেবে দায়িত্ব? গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানোই যে ওর স্বভাব।
গোঁয়ার গোবিন্দ (নির্বোধ ও একগুঁয়ে লোক) : কাজটা বুঝে শুনে করবে। গোঁয়ার গোবিন্দের মতো করলে চলবে না।
গোড়ায় গলদ (মূলে কিংবা শুরুতে ভুল) বিয়ের আয়োজনে গোড়ায় গলদ ছিল বলে এত বিশৃঙ্খলা।
গোবর গণেশ (বোকা, অকর্মণ্য লোক) : ছেলেটার না আছে বুদ্ধি, না পারে কোনো কাজ ও একেবারে গোবর গণেশ।
গোল্লায় যাওয়া (উচ্ছন্নে যাওয়া) : বাবা-মায়ের আদরের ঠেলায় ছেলেটা গোল্লায় গেছে।
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া (উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে স্বস্তি) : ছেলেটা ঘরে ফিরে আসায় সবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
ঘাস কাটা (বাজে কাজে সময় নষ্ট করা) : অন্যেরা কাজ করবে আর তুমি বসে বসে ঘাস কাটবে? তা হবে না।
ঘোড়া রোগ (উৎকট বাতিক) : ভাত জোটে না, বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করতে চায় গরিবের ঘোড়ারোগ আর কি!
ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া (ওপরওয়ালাকে এড়িয়ে কাজ হাসিল) : সরকারি অফিসে ঘোড়া ডিঙিয়ে মাস খাওয়া কঠিন।
ঘোড়ার ডিম (অস্তিত্বহীন বস্তু) : ও তোকে বইটা দেবে? ঘোড়ার ডিম দেবে।
চাঁদের হাট (সুখের সংসার) : অবসর জীবনে শরীফ সাহেব কৃতী সন্তানদের নিয়ে চাঁদের হাট বসিয়েছেন।
চোখে চোখে রাখা (সতর্ক নজরদারি) : অজানা-অচেনা কেউ এলে তাকে চোখে চোখে রাখা দরকার।
চোখে ধূলো দেওয়া (ফাঁকি দেওয়া) : পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে অপরাধী গা ঢাকা দিয়েছে।
চোখের বালি (চক্ষুশূল ক্রোধ বা বিরক্তির কারণ) : মা-মরা ছেলেটা কত শান্ত, তবু সে তার সৎ-মায়ের চোখের বালি।
ছিনিমিনি খেলা (বেহিসাবি খরচ) : উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে অনেক ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।
হেঁকে ধরা (ঘিরে ধরা) : বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সবাই কারখানার মালিককে হেঁকে ধরেছে।
ছেলের হাতের মোয়া (সহজপ্রাপ্য জিনিস) ভালো ফলাফল ছেলের হাতের মোয়া নয়, এ জন্যে যথেষ্ট পড়াশুনা দরকার।
জগাখিচুড়ি (অবাঞ্ছিত জটিলতা) তোমার জগাখিচুড়ি কাজ দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে ওঠে।
জিলিপির প্যাচ (কুটিল বুদ্ধি) : ওর মনে যে এত জিলিপির প্যাঁচ তা বুঝব কী করে।
ঝোপ বুঝে কোপ মারা (সুযোগ বুঝে কাজ করা) ঝোপ বুঝে কোপ মারতে না জানলে ব্যবসায়ে টেকা মুশকিল।
টনক নড়া (চৈতন্য হওয়া) ব্যবসা লাটে উঠতেই তার টনক নড়ল।
ঠাঁট বজায় রাখা ( অভাব লুকানো) : জমিদারি নেই, কিন্তু চৌধুরী বংশে এখনও জমিদারি ঠাঁট বজায়আছে।
ঠোঁট কাটা (স্পষ্টবাদী) : ঠোঁট কাটা লোক অনেকেরই অপছন্দ।
ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য ব্যক্তি বা বস্তু): কী ব্যাপার। তুমি হঠাৎ ডুমুরের ফুল হয়ে উঠলে যে?
ঢিমে তেতালা (খুবই মন্থর গতি) : এমন ঢিমে তেতালাভাবে পড়াশুনা করলে সিলেবাস শেষ হবে না।
তালকানা (তালজ্ঞান বর্জিত) : উনি ভালকানা লোক। এর কাছে পরিপাটি কাজ আশা করছ কেন?
থ বনে যাওয়া (বিস্ময়ে হতবাক হওয়া) লোকটার কাণ্ড দেখে সবাই থ বনে গেল।
তাসের ঘর (ভঙ্গুর) : ওদের বন্ধুত্ব তাসের ঘরের মতোই ভেঙে গেছে।
তামার বিষ (অর্থের কুপ্রভাব) : তামার বিষে ওরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।
দা-কুমড়ো (নিদারুণ শত্রুতা) : ভাইয়ে ভাইয়ে এখন একেবারে দা-কুমড়ো সম্বন্ধ।
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু) : ধনীর দুলাল ছেলেটাকে দুধের মাছিরা ঘিরে রেখেছে।
দুমুখো সাপ (দু রকম আচরণকারী, ক্ষতিকর লোক) : লোকটা আস্ত দুমুখো সাপ, তোমাকে বলেছে একরকম আমাকে অন্যরকম।
ধরাকে সরা জ্ঞান করা (অতিরিক্ত দয়ে কিছুই গ্রাহ্য না করা) : পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।
ননীর পুতুল (অল্প শ্রমে কাতর) : ফারিহা তো ননির পুতুল, এত পরিশ্রমের কাজ ওকে দিয়ে হবে না
নাক গলানো (অনধিকার চর্চা) : যে-কোনো ব্যাপারে নাক গলানো কারো কারো স্বভাব।
নেই আঁকড়া (নাছোড়বান্দা): কী যে নেই আঁকড়া লোকের পাল্লায় পড়েছি! রেহাই মিলছে না।
পটল তোলা (মারা যাওয়া) : চাঁদাবাজটা পটল তুলেছে শুনে এলাকার লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
পথে বসা (সর্বস্বান্ত হওয়া): বন্যায় সব হারিয়ে অনেকে এবার পথে বসেছে।
পালের গোদা (দলের চাই, সর্দার) : পুলিশ পালের গোদাকে কোর্টে চালান দিয়েছে।
পুকুর চুরি (বড় রকম চুরি) : রাস্তা মেরামত না করেই ঠিকাদার ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে এ যে রীতিমতো পুকুর চুরি।
ফাঁক-ফোকর (দোষত্রুটি) আইনের ফাঁক-ফোকর গলে সন্ত্রাসীরা জামিনে খালাস পেয়ে যাচ্ছে।
ফেঁপে ওঠা (হঠাৎ বিত্তবান হওয়া): চোরাচালানি করে কেউ কেউ রাতারাতি ফেঁপে উঠেছে।
ফোড়ন কাটা (টিপ্পনী কাটা) : কথার মাঝখানে ফোঁড়ন কাটা ওর অভ্যাস।
ফোপরদালালি (নাক গলানো আচরণ) সব ব্যাপারে ওর ফোপরদালালি করার অভ্যাস।
বকধার্মিক (ভণ্ড) : সমাজে বকধার্মিক লোকের অভাব নেই।
বর্ণচোরা আম (কপট লোক) : লোকটা একটা বর্ণচোরা আম। বাইরে থেকে ওকে বোঝা মুশকিল।
বাঁ হাতের ব্যাপার (ঘুষ দেওয়া-নেওয়া) : এ অফিসে বাঁ হাতের ব্যাপার ছাড়া ফাইল নড়ে না।
বাজিয়ে দেখা (পরখ করা) : সে ঘটনাটা জানে কিনা একটু বাজিয়ে দেখতে হবে।
বাপের বেটা (সাহসী) : শাবাশ! বাপের বেটার মতোই করেছিস কাজটা।
বালির বাঁধ (ক্ষণস্থায়ী) : বড়লোকের ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর বালির বাঁধ একই কথা ।
বিড়াল-তপস্বী (ভণ্ড সাধু) : সমাজে মাঝে মাঝে বিড়াল তপস্বীদের তৎপরতা বেড়ে যায়।
বিদ্যার জাহাজ (মূর্খ বা অশিক্ষিত লোক) যে নিজে বিদ্যার জাহাজ সে অন্যকে কী শেখাবে?
বুকের পাটা (সাহস) : মাস্তানটার বিরুদ্ধে তুই অভিযোগ করেছিস। তোর বুকের পাটা আছে বলতে হবে।
বুদ্ধির ঢেঁকি (নির্বোধ) : এ কাজের জন্য চাই চালাক-চতুর লোক, বুদ্ধির ঢেঁকি দিয়ে এ কাজ হবে না।
ভিজে বেড়াল (বাইরে নিরীহ ভেতরে ধূর্ত) : ভিজে বেড়ালদের অনেক সময় চেনা যায় না।
ভরাডুবি (সর্বনাশ) : আদমজি পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটচাষিদের এবার ভরাডুবি হয়েছে।
ভুঁইফোড় (হঠাৎ বড়লোক) : মানুষ সচেতন হলে ভুঁইফোড়দের দাপট না কমে পারে না।
ভূতের বেগার (অযথা শ্রম দান) : সারাক্ষণ ভূতের বেগার খাটছি, লাভ কিছুই হচ্ছে না।
মামাবাড়ির আবদার (চাইলেই পাওয়া যায় এমন) : গতকাল ১০০ টাকা নিলে। আজ আবার ২০০ টাকা চাইছ। একি মামাবাড়ির আবদার নাকি?
মিছরির ছুরি (আপাতত মধুর হলেও শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক) : তোমার কথাগুলো ঠিক যেন মিছরির ছুরি।
যক্ষের ধন (কৃপণের কড়ি) : পৈতৃক ভিটেটা সে যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছে।
রুই-কাতলা (প্রভাবশালী) : সমাজের রুই-কাতলাদের দাপটে চুনোপুঁটিদের অবস্থা এখন কাহিল ।
লেফাফা দুরস্ত (বাইরের ঠাঁট ষোল আনা) : ঘরে যে এমন টানাটানি, তা ওর লেফাফা দুরস্ত ভাব দেখে কে বুঝবে?
রাশভারি (গম্ভীর) : আমাদের প্রধান শিক্ষক রাশভারি লোক। সবাই তাকে ভয় পায় ।
শাপে বর (অনিষ্টে ইষ্ট লাভ) : আমার বড়মামা চাকরি না পেয়ে ব্যবসায়ে ঢুকেছেন। এতে তাঁর শাপে বর হয়েছে।
সেয়ানে সেয়ানে (দুই সমান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে) : দুজনের মধ্যে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছে অনেকদিন।
সোনায় সোহাগা (সার্থক মিলন) : পরীক্ষায় পাস করতে না-করতেই এমন ভালো চাকরি পাওয়া, এ যে সোনায় সোহাগা!
হ-য-ব-র-ল (উল্টোপাল্টা) : অনুষ্ঠানের হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখে চলে এসেছি।
হাড়-হাভাতে (একেবারে নিঃস্ব) : হাড়-হাভাতে ছেলেটা যে কীভাবে এ সংসারে এসে জুটল বলতে পারব না।
হাতটান (ছোটখাটো চুরির অভ্যাস) : ছেলেটা কাজে-কর্মে বেশ ওস্তাদ। তবে দোষের মধ্যে হাতটান আছে।
হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল) : হাতের পাঁচ হিসেবে হাজারখানেক টাকা আছে। তোমাকে ধার দেব কেমন করে?
হালে পানি না পাওয়া (কাজ হাসিলের উপায় না পাওয়া) : সে বড় কাজে হাত দিয়েছে, কিন্তু হালে পানি পাচ্ছে না।
Comments
Post a Comment