শ্রমের মর্যাদা রচনা। শ্রম কাকে বলে।শ্রমের গুরুত্ব

 
শ্রমের মর্যাদা


ভূমিকা : শ্রম প্রতিটি মানুষের মধ্যেকার আশ্চর্য নিহিত শক্তি। এই শ্রমের শক্তিতেই মানুষ রচনা করেছে মানবসভ্যতার বুনিয়াদ । আদিম যুগে একদা পাথরের নুড়ি দিয়ে শ্রমের সাহায্যে মানুষ তৈরি করেছিল প্রথম হাতিয়ার। তারপর সুদীর্ঘকাল ধরে মানুষ তিল তিল শ্রমে গড়ে তুলেছে সভ্যতার বিরাট সৌধ। শ্রমের কল্যাণেই মানুষ পশুজগৎ থেকে নিজেকে করেছে পৃথক। মানুষ যে আধুনিক যন্ত্র চালায়, সূক্ষ্ম ছবি আঁকে, কিংবা অপরূপ সুরের ঝংকার তোলে – তার মূলে রয়েছে শ্রমের অবদান ।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : মানবসভ্যতা শ্রমেরই অবদান। কিন্তু শ্রমের প্রতি মনোভাব সবসময় একরকম ছিল মাধ্যমিক বাংলা রচনা না। আদিম সমজে যোথশ্রমের মূল্য ছিল। কিন্তু সমাজে শ্রেণিবিভেদ দেখা দিলে শ্রয় মর্যাদা হারাতে থাকে । প্রাচীন রোম ও মিশরে শ্রমজীবীদের সামাজিক মর্যাদা ছিল না। তাদের গণ্য করা হতো ক্রীতদাস হিসেবে। সামন্তযুগে কৃষকরাই শ্রমজীবীর ভূমিকা পালন করেছে। তারাও ছিল মর্যাদাহীন, শোষিত ও বঞ্চিত। শিল্পবিপ্লবের পর পুঁজিবাদী দুনিয়ার শ্রমিকরা শোষিত হলেও তারা গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ করে। রুশবিপ্লবের পর শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হলে শ্রমিকরা মর্যাদা পায় সবচেয়ে বেশি।


শ্রমের মহিমা : শ্রম কেবল সমৃদ্ধির উৎস নয়। তা মানুষকে দেয় সৃজন ও নির্মাণের আনন্দ। মানুষ যে প্রতিভা নিয়ে জন্মায় তার বিকাশের জন্যও দরকার শ্রম। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ গড়ে তোলে নিজের ভাগ্যকে । পৃথিবীতে যা-কিছু মহান সৃষ্টি তা মূলত শ্রমেরই অবদান।


দৈহিক ও মানসিক শ্রম : মানব-ইতিহাসে দেখা যায়, পরজীবী শ্রেণি সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় সামাজিক অসাম্য। মজুর-চাষি-মুটে-কুলি, যারা কায়িক শ্রম করে তাদের অবস্থান হয় সমাজের নিচের তলায়। অন্নহীন, বস্ত্রহীন, শিক্ষাহীন মানবেতর জীবন হয় তাদের নিত্যসঙ্গী। অন্যদিকে পরজীবী শ্রেণি ডুবে থাকে বিলাসিতায়। সমাজে শ্রমজীবী মানুষের নিদারুণ দুরবস্থাই মানুষের মনে শ্রমবিমুখতার জন্ম দিয়েছে। কায়িক শ্রমের প্রতি সৃষ্টি হয়েছে একধরনের অবজ্ঞা ও ঘৃণার মনোভাব। এর ফল কল্যাণকর হতে পারে না। প্রত্যেক মানুষই নিজ নিজ যোগ্যতা ও শক্তি অনুসারে সমাজের সেবা করছে। কোনোটা দৈহিক শ্রম, কোনোটা মানসিক শ্রম । তাই কোনোটিকেই অবহেলা করা বা ছোট করে দেখার অবকাশ নেই ।


আরও পড়ুন 

জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা রচনা



শ্রমের গুরুত্ব : দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জন্যে, সমাজ ও জাতির অগ্রগতির জন্যে শ্রম এক অপরিহার্য উপাদান । অজস্র মানুষের দেখা-অদেখা শ্রমের সমাহারের ওপর নির্ভরশীল আমাদের সবার জীবন ও কর্ম। তা দৈহিক ও মানসিক দু ধরনের শ্রমের অদৃশ্য যোগসূত্রে বাঁধা। এ কথা স্বীকার না করে আমাদের উপায় নেই যে, মজুর এবং ম্যানেজার, কৃষক এবং কৃষি অফিসার, কুলি এবং কেরানি, শিক্ষক এবং শিল্পী—কারো কাজই সমাজে উপেক্ষার নয় । প্রত্যেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করলেই সমাজের অগ্রগতি সাধিত হয়। একথা মনে রেখে সবাইকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে হবে।


উপসংহার : শত শত শতাব্দীর পর বিশ শতকের পৃথিবীতে শ্রমজীবী মানুষের সামনে এক নবযুগ আসে। মেহনতি মানুষের মর্যাদা দিতে বাধ্য হয় সমাজের ওপরতলার মানুষ। সোভিয়েত ইউনিয়নে, চিনে, ভিয়েতনামে এবং আরো অনেক দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় মেহনতি মানুষ পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিজ্ঞানের কল্যাণে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রেক্ষাপটে সমাজে শ্রমের গুরুত্ব এখন অনেক স্বীকৃত। শ্রমশক্তিই যে সমাজ-সভ্যতার নির্মাণ ও সাফল্যের চাবিকাঠি, বিশ্ব আজ তা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে। উন্নত দেশগুলিতে শ্রমজীবী মানুষের বহু অধিকার ও মর্যাদা ক্রমেই স্বীকৃতি লাভ করছে। আমরাও যদি সবার শ্রমকেই সমান মর্যাদা দিই তবে দেশ ও জাতি দ্রুত অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে, যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে।

Comments

Popular posts from this blog

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে।।Human Resource Management

হস্তান্তর পাওনা বা হস্তান্তর ব্যয় কাকে বলে?

মূলধন কাকে বলে?।। What is capital?